হারুত ও মারুত ফেরেশতার প্রেমকাহিনীঃ

পবিত্র কোরআন তাফসীর সহকারে পড়লে আপনি হয়তো এই ব্যাপারে জানতে পারতেন। আর হারুত ও মারুত দু’জন ফেরেশতা যোহরা নামক মহিলার প্রেমে পড়েছিলো মর্মে কোন সহীহ হাদীস নেই।
হারূত ও মারূতকে নিয়ে কোরআনে একটি মাত্র আয়াত রয়েছে, সেই আয়াতটি হলো-
وَاتَّبَعُوا مَا تَتْلُو الشَّيَاطِينُ عَلَىٰ مُلْكِ سُلَيْمَانَ ۖ وَمَا كَفَرَ سُلَيْمَانُ وَلَٰكِنَّ الشَّيَاطِينَ كَفَرُوا يُعَلِّمُونَ النَّاسَ السِّحْرَ وَمَا أُنزِلَ عَلَى الْمَلَكَيْنِ بِبَابِلَ هَارُوتَ وَمَارُوتَ ۚ وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ ۖ فَيَتَعَلَّمُونَ مِنْهُمَا مَا يُفَرِّقُونَ بِهِ بَيْنَ الْمَرْءِ وَزَوْجِهِ ۚ وَمَا هُم بِضَارِّينَ بِهِ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَتَعَلَّمُونَ مَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ ۚ وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ ۚ وَلَبِئْسَ مَا شَرَوْا بِهِ أَنفُسَهُمْ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
-আর তারা তার অনুসরণ করে যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে চালু করেছিল, আর সুলাইমান অবিশ্বাস পোষণ করেন নি, বরং শয়তান অবিশ্বাস করেছিল, তারা লোকজনকে জাদুবিদ্যা শেখাতো, আর তা বাবেলে হারূত ও মারূত এই দুই ফিরিশ্‌তার কাছে নাযিল হয় নি, আর এই দুইজন কাউকে শেখায়ও নি যাতে তাদের বলতে হয় -‘আমরা এক পরীক্ষা মাত্র, অতএব অবিশ্বাস করো না।’ সুতরাং এই দুইয়ের থেকে তারা শিখেছে যার দ্বারা স্বামী ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। কিন্তু তারা এর দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহ্‌র অনুমতি ব্যতীত। আর তারা তাই শেখে যা তাদের ক্ষতিসাধন করে, এবং তাদের উপকার করে না। আর অবশ্যই তারা জানে যে এটা যে কিনে নেয় তার জন্য পরকালে কোনো লাভের অংশ থাকবে না। আর আফসোস, এটা মন্দ যার বিনিময়ে তারা নিজেদের আ‌ত্মা বিক্রয় করেছে, -যদি তারা জানতো।[সূরা বাক্বরা ১০২]
কোরআনে হারূত ও মারূতকে নিয়ে প্রেম সংক্রান্ত কোন কথা বলা না হলেও অনেক তাফসীরকারক এই আয়াতের ব্যাখ্যা করার সময় একটি মিথ্যা, বানোয়াট গল্প উল্লেখ করে থাকেন।
!
গল্পটি হলোঃ
=========
ফেরেশতারা মহান আল্লাহকে বলেছিলো,
-‘প্রতিপালক! আমরা আদম সন্তানের চাইতে বেশী আনুগত্যশীল।’ আল্লাহ বললেন,
-‘তোমরা দুই জন ফেরেশতা বাছাই করো। তাদের আমি দুনিয়াতে পাঠাবো এবং তারা কেমন আমল করে আমি দেখবো।’
ফেরেশতারা হারুন ও মারুত বাছাই করলো এবং তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হলো। অপরদিকে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী যোহরা নামের এক মহিলাকে তাদের সামনে পেশ করা হলো। সে তাদের সামনে আসতেই তারা (ফেরেশতাদ্বয়) তার সাথে মিলিত হতে চাইলো। মেয়েটি তা অস্বীকার করে বললো,
-‘আপনারা আল্লাহর সাথে শিরক না করলে আমি রাজী নই।’ তারা বললো,
-‘আল্লাহর কসম! আমরা আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শিরক করবো না।’
মেয়েটি চলে গেলো এবং একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পূনরায় ফিরে এলো। তারা পুনরায় তার সাথে মিলিত হতে চাইলো। মেয়েটি তা অস্বীকার করে বললো,
-‘এই বাচ্চাটিকে হত্যা না করলে আমি রাজী নই।’ তারা বললো,
-‘আল্লাহর কসম! আমরা এই বাচ্চাটিকে হত্যা করতে পরি না।’
মেয়েটি চলে গেলো এবং এক পেয়ালা মদ নিয়ে আসলো। তারা তার সাথে মিলিত হতে চাইলো। মেয়েটি তা অস্বীকার করে বললো,
-‘মদ পান না করা পর্যন্ত আমি রাজী নই।’
অতপর ফেরাশতা দু’জন মদ পান করলো, ফলে তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত হলো। তখন তারা বাচ্চাটিকে হত্যা করলো এবং মেয়েটির সাথে যিনায় লিপ্ত হলো।
মদ পানের রেশ কেটে যেতেই ফেরেশতাদ্বয়কে মেয়েটি বললো,
-‘আল্লাহর কসম! আপনারা যা অস্বীকার করেছিলেন, মদ পান করার পর তার সবকিছুই করে ফেললেন।’
অতপর তাদেরকে ইহকাল ও পরকালের শাস্তির এখতিয়ার দেওয়া হলো। তারা ইহকালের শাস্তি গ্রহণ করলো। তাই তাদের ইরাকের বাবেল শহরে লোহার শিকল দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে অথবা আকাশে ঝুলন্ত রাখা হয়েছে।
!
আলোচ্য উপরে ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তাই হারূত ও মারূতকে নিয়ে কেচ্ছা-কাহিনী বর্ণনা করা হতে আমাদের বিরত থাকা জরুরী। ইবনে কাসির বিস্তারিত আলোচনা করার পর বলেন, “এ মর্মে কোন নির্ভরযোগ্য হাদীস নেই।” কুরআনেরও বিস্তারিত কিছু বলা হয় নাই। কোরআনে যতটুকু বলা হয়েছে, তার উপর বিশ্বাস রাখা উচিৎ।
[ইবনু কাসির ১/১৮৮, সূরা বাক্বরা ১০২ নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য]

Categories: প্রেমকাহি | ট্যাগ সমুহঃ | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

পোস্টের নেভিগেশন

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Blog at WordPress.com.