ইসলামের নামে এত দল, এত মত। কোনটা সঠিক, কোনটা Best কিভাবে জানা যাবে?

আমরা প্রায়ই এই কথাটা শুনি। সাধারণ লোকজন এমনকি ইসলামকে বিজয়ী করার প্রচেষ্টারত অগ্রসর মুসলিমগণও এ রকম প্রশ্ন মাঝে মাঝে করে থাকেন। আসলেই কোনটা সঠিক দল, কোনটা আল্লাহর প্রিয় দল, তা জানতে আমাদের সবারই ইচ্ছা করে।
একটা শান্তনার কথা এই যে, আল্লাহ তায়ালা আল-কোরআনে ঘোষণা করেছেন, যে ব্যক্তি হিদায়াত তথা সঠিক পথ চায়, তিনি অবশ্যই তাকে পথ দেখাবেন।
এছাড়া আল-কোরআনে বলিষ্ঠভাবে বার বার ঘোষণা হয়েছেঃ এটা মানব জাতির পথ-প্রদর্শক, এতে সব ব্যাপারে সমাধান আছে। সকল ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিবরণ না থাকলেও অন্ততঃ যে কোন ব্যাপারে আল-কোরআনে কিছু মূলনীতি দেয়া থাকে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়াল বলেছেনঃ “এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেযগারদের জন্য”। (সূরা আল বাকারাঃ ২)
এটা কিভাবে সম্ভব যে, আল-কোরআন মুত্তাকীদের জন্য পথ-প্রদর্শক অথচ সেখানে কোন ইসলামী দল ভালো, মুসলিমগণ কোন দলেকে বেছে নিবে – সে ব্যাপারে কোন গাইডলাইন থাকবে না।
আলহামদুলিল্লাহ, এ ব্যাপারেও আল্লাহ আমাদেরকে অন্ধকারে রেখে দেন নি। বরং সুস্পষ্টভাবে তাঁর পছন্দনীয় দলের কিছু বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেছেন, যা দেখে মানুষ বুঝতে পারবে, কোন দল সত্য, কোন দল সঠিক পথে আছে, কোন দলকে মুসলিমদের সাপোর্ট করা উচিত, মুসলিম যুবকদের কোন দলে যোগদান করা উচিত। আল্লাহ বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَلاَ يَخَافُونَ لَوْمَةَ لآئِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
অর্থাৎ, “হে মুমিনগণ,তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবে,অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন,যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী,মহাজ্ঞানী� ��। (সূরা আল মায়িদাহঃ ৫৪)
দেখা যাচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা এখানে একদল মানুষ তাঁর দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আরেক দল দ্বারা তাদেরকে পরিবর্তন করার কথা বলেছেন। অবশ্যই যে দলের মাধ্যমে আল্লাহ পূর্ববর্তী দলকে পরিবর্তন করবেন, সেটা অবশ্যই ভালো দল হবে এবং আল্লাহর প্রিয় দল হবে।
এখনে আল্লাহ তাঁর সেই প্রিয় দল বা সম্প্রদায়ের ৪ টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেনঃ
ক) ঐ দলকে আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং ঐ দলও আল্লাহকে ভালোবাসবে।
খ) ঐ দল মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হবে, নম্র হবে।
গ) ঐ দল কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে।
ঘ) ঐ দল আল্লাহর পথে জিহাদ করবে কোন তিরস্কারকারীর পরোয়া না করে।
চলুন একটু বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।
প্রথমতঃঐ দলকে আল্লাহ ভালোবাসবেন এবং ঐ দলও আল্লাহকে ভালোবাসবে।
এই বৈশিষ্ট্য আসলে বাইরে থেকে বুঝা সম্ভব না। প্রত্যেক দলই দাবী করবে যে, তারা আল্লাহকে ভালোবাসে আর আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন।
দ্বিতীয়তঃঐ দল মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হবে, নম্র হবে।
মুমিনদের প্রতি বিনয়ী, নম্র মানেই হলো তাদের সাথে সুআচরণ করা, তাদের দুঃখে দুঃখী হওয়া, সুখে সুখী হওয়া। ঐ দল মুসলিম উম্মাহর সাথে একটি দেহের মতো হয়ে থাকবে।
এমন হবে না যে, ফিলিস্তিনে শত শত মুসলিম মারা যাচ্ছে, বার্মায় মুসলিমদের উপর নির্যাতন হচ্ছে আর ঐ দল তখন তথাকথিত কোন ইস্যুর রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত, এ ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই।
এমন হবে না যে, শত্রুরা বিভিন্ন মুসলিম দেশ দখল করে রেখেছে আর ঐ দলের এ ব্যাপারে কোন উচ্চবাচ্য নেই। তারা শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। ঐ দল যে কোন মুসলিম ভূমি দখল হলে ঐ ভূমি পুনরুদ্ধার করার ফরজ জিহাদে শরীক হবে। অসহায়, নির্যাতিত মুসলিমদেরকে রক্ষার জন্য জিহাদে বের হয়ে যাবে যেভাবে আল্লাহ আল কোরআনে ঘোষণা দিয়েছেন। দেখুন সুরা নিসার ৪৫ নম্বর আয়াত।
এমন তো হয় না যে, আমরা আমাদের পিতামাতার প্রতি খুবই নম্র-কোমল কিন্তু কোন ডাকাত দল আমাদের পিতামাতাকে আক্রমণ করলো আর আমরা কিছু না করে বসে থাকি। যদি হাতের দ্বারা সামর্থ না থাকে তা হলে অন্তত আমরা মুখে চিৎকার করে আশেপাশের লোকজনকে ডাক দেই। এতটুকু না করলে তা আমাদের পিতামাতাকে সম্মান করা কিংবা তাদের সাথে নম্র ব্যবহার হবে না বরং ভন্ডামী হবে। আর যদি আমরা নিজেরাই ঐ ডাকাতদলের সাথে আবার বন্ধুত্ব করি, তাহলে কি পরিস্থিতি কি হবে?
একই ভাবে, ভালো ইসলামী দল মুসলিম উম্মাহর প্রতি নমনীয় হবে। তাদেরকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে, সাহায্য করবে, শুধু নিজ দলের কিংবা নিজ দেশের মুসলিমদের প্রতি তাদের সহানুভূতি সীমাবদ্ধ রাখবে না। আর কখনো মুসলিম উম্মাহর সাথে যুদ্ধরত কাফিরদের সাথে অন্ততঃ বন্ধুত্ব করবে না, হৃদ্যতা রাখবে না। সেটাতো ঈমান বিধ্বংশী কুফর। আল্লাহ বলেছেনঃ
“তারা তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে“। (সূরা আল মায়িদাহঃ ৫১)
তৃতীয়তঃঐ দল কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে।
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এ সাহাবী (রাঃ) গণও এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ বলেনঃ
“আল্লাহর রাসুল মুহাম্মদ ও তার সাথীগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর আর নিজেদের মধ্যে পরস্পর দয়াবান” (সূরা আল-ফাতহঃ ২৯)
এখন যদি কোন ইসলামী দল কাফির দেশের রাস্ট্রপতি, পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিংবা রাস্ট্রদূত দেখলে আহলাদে গলে যায়, হাত কচলিয়ে মুসাহেবের মতো তাদের সাথে কথা বলে, মুসলিমদের কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের কাছে পরামর্শ নেয়, সেটা কি কাফিরদের প্রতি কঠোরতা হলো?
যদি কোন ইসলামী দল, নিজ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কাফির দেশের রাস্ট্রদূতের সাথে আলোচনা করে বলে, অমুক ব্যাপারে তার সাথে আমাদের অত্যন্ত সফল আলোচনা হয়েছে। তাহলে তো সে কাফিরদের প্রতি কঠোর হবার পরিবর্তে কাফিরদের প্রতি আকৃষ্ট হলো। তাদেরকে উপদেষ্টা, পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রহণ করলো। অথচ আল্লাহ বলেছেনঃ
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না”। (সুরা আল মায়িদাহঃ ৫১)
কাফিরদের প্রতি কঠোরতা প্রকাশ পেয়েছে, আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর কথায় যখন তিনি বলেছিলেনঃ
“তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদত কর,তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা থাকবে”। (সূরা মুমতাহিনাঃ ৪)
এখন যে সব দল কাফিরদের প্রতি কঠোর নয়, যারা কাফিরদের প্রতি নমনীয়, যারা মুসলিম বনাম কাফিরদের যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে কথা বলতে পারে না, বরং যুদ্ধরত কাফিরদেরকে সম্মান করে কথা বলে, তারা তো কোন ভাবেই কাফিরদের প্রতি কঠোর নয়।
চতুর্থতঃঐ দল আল্লাহর পথে জিহাদ করবে কোন তিরস্কারকারীর পরোয়া না করে।
জিহাদের শাব্দিক অর্থ চেষ্টা-সাধনা হলেও অন্যান্য ইবাদাতের মতো ইসলামে জিহাদেরও একটি সুনির্দিষ্ট রুপ আছে, তা হচ্ছে কাফিরদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধ যা বিভিন্ন মাজহাবের ফিকহের গ্রন্থগুলিতে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে। আর হাদিস গ্রন্থগুলিতেও জিহাদ অধ্যায়ে শুধু যুদ্ধের কথাই আছে, সেখানে দাওয়াতের জিহাদ, কলমের জিহাদ, নফসের জিহাদ কিংবা এরকম কোন জিহাদের কথা নেই।
আর ফি সবিলিল্লাহ বললে, সেক্ষেত্রে আরো নির্দিষ্টভাবে সশস্ত্র যুদ্ধের কথা বুঝা যায় বলেই সলফে সালেহীনরা উল্লেখ করেছেন।
তাই আল্লাহর সেই প্রিয় দল তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য কিংবা মুসলিমদের ভূমি, মান-সম্মান রক্ষার জন্য জিহাদ করবে, কাফিরদের বিভিন্ন আগ্রাসন রুখে দেয়ার জন্য জিহাদ করবে। এবং এক্ষেত্রে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারের ভয় তারা করবে না।
এখন যে সব দল কখনো জিহাদ করেনি, জিহাদের জন্য যাদের কোন পরিকল্পণা নেই, পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয়ে জিহাদের জন্য কোন প্রস্তুতি নিতে ভয় পায় বরং মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কাফিরদের সাথে দহরম-মহরম বজায় রাখে, তারা কখনো আল্লাহর প্রিয় ইসলামী দল হতে পারে না।
বরং আল্লাহর প্রিয় দল, ভালো ইসলামী দল আল্লাহর পথে জিহাদ করতে থাকবে কোন প্রকার তিরস্কারের পরোয়া না করে। একই ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
“এই দ্বীন সর্বদাই প্রতিষ্টিত থাকবে এবং মুসলিমদের একটি দল কিয়ামত পর্যন্ত সত্যের পক্ষে যুদ্ধ (ক্বিতাল) করবে”। (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ ৫০৬২)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর পছন্দনীয় পথে চলার, সঠিক দলের সাথে থাকার তৌফিক দিন। আমীন।

Categories: Uncategorized | এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

পোস্টের নেভিগেশন

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান

Create a free website or blog at WordPress.com.